গলদা চিংড়ির হ্যাচারিতে সঠিকভাবে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো স্থাপন, ধারণক্ষমতা ও ব্যবহারের উপযোগীতার ওপর এর উৎপাদন সফলতা নির্ভর করে। হ্যাচারির ধরন, হ্যাচারি পরিচালনা পদ্ধতি, উৎপাদন ক্ষমতা এবং উৎপাদন এলাকার পরিবেশের সাথে অবকাঠামোর পার্থক্য বা পরিবর্তন হতে পারে। সুতরাং, একটি হ্যাচারি নির্মাণের পূর্বে সংশ্লিষ্ট এলাকার পরিবেশগত বিষয়সমূহ বিবেচনায় রেখে অভিজ্ঞ নকশাকার দিয়ে এর নকশা তৈরি করে নিতে হবে। নকশা তৈরির সময় নিম্নোক্ত বিষয় সমূহের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।
১. নির্বাচিত এলাকার ভৌগলিক সুবিধা
২. পারিপার্শ্বিক পরিবেশ এবং পরিবেশ সংরক্ষণ
৩. উৎপাদন উপকরণ সংগ্রহের সুবিধা
৪. স্থানীয় জনগনের গ্রহণযোগ্যতা ও সম্পৃক্ততা
৫. হ্যাচারিতে কর্মরত শ্রমিকদের সার্বিক নিরাপত্তা
৬. হ্যাচারি পরিচালনার ঝুঁকিসমূহ অপসারণ বা কমানোর সুবিধা
৭. হ্যাচারির বর্জ্য নিষ্কাশন ও আবর্জনা অপসারণের সুবিধা এবং
৮. জীব নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের সুবিধা।
গলদা চিংড়ি হ্যাচারির ভৌত অবকাঠামো সঠিকভাবে এবং সঠিক ধারণক্ষমতা সম্পন্নভাবে নির্মাণ করা না হলে উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে এবং হ্যাচারি পরিচালনায় বিভিন্ন ধরনের জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। হ্যাচারিতে কর্মরত কর্মচারীদের ব্যবহার উপযোগিতার কথা বিবেচনায় রেখে সঠিক ডিজাইন এবং আয়তনের অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে। গলদা চিংড়ি হ্যাচারির ভৌত অবকাঠামোর ডিজাইন এবং আয়তন নিম্নলিখিত বিষয়ের উপরে নির্ভর করে-
১. ভূমির আকার, আয়তন, পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও অবস্থানগত সুবিধা
২. মূলধন বিনিয়োগের সামর্থ্য
৩. উৎপাদনযোগ্য চিংড়ির প্রজাতি
৪. হ্যাচারির উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা, পোনার বাজার ও ব্রুড চিংড়ির প্রাপ্যতা, এবং
৫. হ্যাচারি পরিচালনায় দক্ষ জনবল।
উপরোল্লিখিত বিষয়াদির প্রেক্ষাপটে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পরিচালিত একটি আদর্শ গলদা চিংড়ি হ্যাচারিতে নিম্নলিখিত ভৌত সুবিধা থাকা প্রয়োজন।
গলদা চিংড়ি হ্যাচারির ভবনটি খোলামেলা জায়গায় হওয়া প্রয়োজন। ইটের সাধারণ গাঁথুনির উপরে অ্যাসবেস্টস অথবা ফাইবার শিটের ছাউনী দেয়া হলে ভবনের অভ্যন্তরে পরিচালিত উৎপাদন কাজে পানির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়। গলদা চিংড়ি হ্যাচারিতে লার্ভা প্রতিপালনের ট্যাংকে প্রচুর আলো পড়ার প্রয়োজন হয়। তাই অ্যাসবেস্টসের ছাউনীর ক্ষেত্রে এলআরটি-এর ঠিক উপরে স্বচ্ছ ফাইবার শিট স্থাপন করে ট্যাংকে আলো পড়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। হ্যাচারি ভবনের অভ্যন্তরে বিভিন্ন উৎপাদন ট্যাংকসমূহ ছাড়াও আর্টিমিয়া হ্যাচিং এর ব্যবস্থা, ল্যাবরেটরি, অফিস, স্টোর, ফিডরুম, ওয়াশরুম ইত্যাদির সংস্থান রাখতে হবে। তাই নির্মাণকালে এমনভাবে এর নকশা প্রণয়ন করতে হয় যেন বিভিন্ন ইউনিটের মধ্যে যাতায়াতে কোনো সমস্যা না হয়, অথচ হ্যাচারির জীব-নিরাপত্তা ব্যাহত হয় না।
গলদা চিংড়ির হ্যাচারি পরিচালনা করতে হলে সারা মৌসুমেই লবণ পানির প্রয়োজন হয়। তাই প্রথমেই লবণ পানি মজুদ করে রাখতে হয়। যে সব এলাকায় কেবলমাত্র বছরের নির্দিষ্ট সময়ে ব্রাইন পাওয়া যায় (লবণ তৈরির মাঠ বা বিশেষ ভাবে হ্যাচারিতে ব্যবহারের জন্য উৎপাদিত ব্রাইন) সে এলাকা থেকে ব্রাইন সংগ্ৰহ করে মজুদ ট্যাংকে রাখতে হয়। এ ট্যাংক মাটির উপরে বা মাটির নিচে বা অর্ধেক মাটির নিচে স্থাপন করা যায়। এ ট্যাংক সিমেন্ট-কংক্রিটের দ্বারা নির্মাণ করে পানি প্রবেশ ও বাহির এবং পরিষ্কার করার পাইপলাইন রাখতে হবে।
ভূগর্ভস্থ পানি দ্বারা গলদা চিংড়ি হ্যাচারিতে স্বাদু পানির চাহিদা মিটানো হয়। এ জন্য টিউবওয়েল, পাম্পমেশিন ও পাম্প হাউস প্রয়োজন। হ্যাচারির দৈনিক পানির চাহিদার উপর নির্ভর করে টিউবওয়েলের পাইপের ব্যাস, পাম্পের শক্তি ও পাম্প হাউসের আয়তন নির্ধারণ করা যেতে পারে।
এ ট্যাংকে স্বাদু পানির সাথে ব্রাইন মিশ্রিত করে নির্ধারিত বা ঈদিত লবণাক্ততা সম্পন্ন পানি তৈরি করা হয় এবং ব্লিচিং পাউডার মিশ্রিত করে পানি শোধন করা হয়। এ ট্যাংকের আয়তন ও সংখ্যা হ্যাচারির উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার উপর নির্ভরশীল। হ্যাচারিতে দৈনিক পানি ব্যবহারের চাহিদার উপরে নির্ভর করে অন্তত ৫ দিনের চাহিদা মিটাতে পারে এরূপ আয়তনের পানি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন শোধন ট্যাংক নির্মাণ করা উচিত। ব্যবস্থাপনা সুবিধার জন্য ১৫-২০ টন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ট্যাংকই উপযোগী। এ ট্যাংক মূল হ্যাচারি ঘরের বাইরে থাকতে পারে। মিশ্রণ ট্যাংক RCC ঢালাই নির্মিত হলে ভালো হয়। খরচ কমানোর জন্য ইটের গাঁথুনি দিয়েও এ ট্যাংক নির্মাণ করা যেতে পারে।
এ ট্যাংকে বালি, কাঠকয়লা, কাঁকর, নুড়িপাথর, ঝিনুক, ইত্যাদি দিয়ে পানি ছাকনি বা ফিল্টার তৈরি করা হয়। পানিতে উপস্থিত সকল প্রকার অদ্রবর্ণীয় কণা, ভাসমান পদার্থ, বিভিন্ন প্রাণির ডিম, লার্ভা ইত্যাদি এমনকি সকল প্রোটোজোয়া, ফাংগাস এবং অধিকাংশ ব্যাকটেরিয়া এ ফিল্টারের সাহায্যে পৃথক করা সম্ভব। হ্যাচারির পানির চাহিদানুযায়ী প্রতি ঘন্টায় কতটুকু পানি ফিল্টার করতে হবে তা নির্ধারণ করে এর আয়তন এবং ধারণক্ষমতা ও সংখ্যা নির্ণয় করতে হয়।
হ্যাচারির উৎপাদন ক্ষমতার উপর নির্ভর করে এর উৎপাদন ট্যাংকে একবারে অনেক পানি সরবরাহের প্রয়োজন হতে পারে। তাই প্রয়োজনের সময় ব্যবহারের উদ্দেশ্যে শোধিত ও পরিশ্রুত পানি প্রয়োজনীয় পরিমাণে জমা রাখার জন্য এ ধরনের ট্যাংকের প্রয়োজন হয়। হ্যাচারিতে প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় পানির ৩-৫ গুণ পানি এ সমস্ত ট্যাংকে মজুদ রাখলে হ্যাচারি পরিচালনা সহজতর হয়।
শোধিত ও পরিশ্রুত মিশ্রিত পানি মাধ্যাকর্ষণ শক্তির সাহায্যে সহজে উৎপাদন ট্যাংকে প্রবাহিত করার জন্য ওভারহেড ট্যাংকের প্রয়োজন হয়। এ ধরনের ট্যাংক সাধারণত সিমেন্ট-কংক্রিটের নির্মিত হয়ে থাকে এবং এর নির্মাণ ব্যয় কিছুটা ব্যয়বহুল হয়ে থাকে। ওভারহেড ট্যাংকের সাহায্যে গলদা চিংড়ি হ্যাচারিতে দৈনিক পানি পরিবর্তনকালে লার্ভা পালন ট্যাংকে পানি সঞ্চালনের গতিবেগ নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়।
বাইরে থেকে সংগৃহীত ব্লুড বা ডিমওয়ালা চিংড়ি এই ট্যাংকে শোধন করা হয়। সাধারণত ০.৫-১ টন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ট্যাংক এ কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কাজের সুবিধার্থে স্থায়ী অবকাঠামো অপেক্ষা ফাইবার গ্লাস বা প্লাস্টিকের স্থানান্তরযোগ্য ট্যাংক এ কাজে ব্যবহার করা হয়।।
ডিম ফুটে লার্ভা বের হওয়া পর্যন্ত পরিপক্ক স্ত্রী গলদা চিংড়িকে এ ট্যাংকে রেখে প্রতিপালন করা হয়। হোল্ডিং ট্যাংক দুই ধরনের হয়ে থাকে। প্রথমত- বাইরে থেকে ডিমওয়ালা চিংড়ি এনে একটি পৃথক চৌবাচ্চায় রাখতে হয়। পরে এ চৌবাচ্চা থেকে যেসব চিংড়ির ডিম ধূসর বর্ণের হবে সেই চিংড়ি দ্বিতীয় হোল্ডিং ট্যাংকে রাখা হয়। একটি ট্যাংকেও এ কার্যক্রম সম্পাদন করা যায় তবে পৃথক ট্যাংক ব্যবহার হ্যাচারি পরিচালনার সহায়ক ও স্বাস্থ্য সম্মত।
এই ট্যাংকে পরিপক্ষ স্ত্রী গলদা চিংড়ি রাখা হয় এবং এখানে এর ডিম ফুটে লার্ভা হয়। অনেক হ্যাচারিতে ব্রুড হোল্ডিং ট্যাংককে হ্যাচিং ট্যাংক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তবে আলাদা হ্যাচিং ট্যাংক ব্যবহার করা স্বাস্থ্য সম্মত। এ কাজে স্থায়ী অবকাঠামো অপেক্ষা PVC ট্যাংক ব্যবহার করা সুবিধাজনক। হ্যাচিং ট্যাংক লম্বাকৃতি বা গোলাকার হতে পারে। এখানে ডিম ফুটার পরে লার্ভা সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সংযোগ করা যায়। তবে এর ধারণক্ষমতা ৫০০ লিটার থেকে ১ টনের মধ্যে হলে ভালো হয়।
এই সমস্ত ট্যাংকে সদ্য ফোটা লার্ভা মজুদ করা হয় এবং পিএল হওয়ার পূর্ব সময় পর্যন্ত প্রতিপালন করা হয়। ট্যাংকের আকার উপ-বৃত্তাকার, গোলাকার অথবা বর্গাকার হতে পারে। ট্যাংক পরিষ্কার করা ও তাতে খাদ্য ও পানি ব্যবস্থাপনার সুবিধার জন্য গোলাকার ট্যাংক অধিকতর সুবিধাজনক। এ ধরনের ট্যাংকের চারিদিকে ঘুরে ঘুরে খাদ্য পরিবেশন করা এবং পরিষ্কার করা সহজতর। ব্যবস্থাপনা সুবিধার জন্য গলদা চিংড়ি হ্যাচারির লার্ভা প্রতিপালনের ট্যাংক সাধারণত ৩ টন থেকে ৫ টনের মধ্যে হয়ে থাকে। ছোট হ্যাচারির জন্য ১-২ টন পানিধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ফাইবার গ্লাস বা প্লাস্টিক ট্যাংকও ব্যবহার করা যায়।
পুনঃসঞ্চালন পদ্ধতিতে গলদা চিংড়ি হ্যাচারি পরিচালনা কালে এলআরটি-এর সাথে বায়োফিল্টার ট্যাংক নির্মাণ করতে হবে। এলআরটি সংলগ্ন বায়োফিল্টার ট্যাংক সাধারণত এলআরটি-এর আয়তনের ২৫% হয়ে থাকে। এ ট্যাংক নির্মাণকালে এলআরটি-এর সাথে বায়োফিল্টার ট্যাংকের মধ্যে পানি পুনঃসঞ্চালনের বিভিন্ন সুবিধার সংস্থান রাখতে হবে। প্রতিটি এলআরটি-এর জন্য পৃথক বায়োফিল্টার ট্যাংক নির্মাণ করতে হবে। বিভিন্ন প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে সম্প্রতি বায়োফিল্টারের মাধ্যমে পানি পুনঃসঞ্চালন পদ্ধতিতে গলদা চিংড়ি হ্যাচারি পরিচালনা নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে বিধায় বর্তমানে অধিকাংশ আধুনিক হ্যাচারিতে এ ট্যাংক নির্মাণ করা হয় না।
লার্ভা পিএল পর্যায়ে রূপান্তরিত হওয়ার পরে এদের প্রতিপালনের পদ্ধতি পরিবর্তন হয়ে যায় বিধায় তখন এদের পৃথক নার্সারি ট্যাংকে প্রতিপালন করার প্রয়োজন হয়। এ কাজে স্থায়ী অবকাঠামো ব্যবহার করা যায়। তবে এলআরটি হিসেবে ব্যবহৃত ট্যাংকও পরিষ্কার করে নিয়ে এ কাজে ব্যবহার করা যায়। নার্সারি ট্যাংকের ডিজাইন ও আয়তন এলআরটি-এর অনুরূপ হতে পারে।
হ্যাচারিতে উৎপাদন কাজের সাথে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে এমন ট্যাংক সিমেন্ট-কংক্রিটের তৈরি হলে এসব ট্যাংকের ভিতরের দেয়ালে মেরিন এ্যাপক্সি পেইন্টের প্রলেপ লাগানো প্রয়োজন। অন্যথায় সিমেন্টের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ছিদ্রের মধ্যে লুকিয়ে থাকা অনেক ধরনের ব্যাকটেরিয়া ও প্রোটোজোয়া পরবর্তীতে ট্যাংকের পানিতে এসে সংক্রমণ ঘটাতে পারে। এর ফলে যে কোনো সময় উৎপাদনে বিপর্যয় ঘটার সম্ভাবনা থাকে। এসব ক্ষতিকর রোগজীবাণু যাতে ট্যাংকের পানির সংস্পর্শে এসে কোনো প্রকার সংক্রমণের সৃষ্টি করতে না পারে সে উদ্দেশ্যে উৎপাদন-ট্যাংকের ভিতরের অংশে এ্যাপক্সি মেরিন পেইন্টের প্রলেপ দেয়া হয়। খেয়াল রাখতে হবে যেন ট্যাংকের কোথাও এ রঙের প্রলেপ উঠে না যায়। এমন হলে সম্পূর্ণ ট্যাংকের এ্যাপক্সি প্রলেপ তুলে ফেলে নতুনভাবে পেইন্ট করতে হবে।
গলদা চিংড়ি হ্যাচারিতে লার্ভা পিএল-এর খাদ্য প্রস্তুত, সংরক্ষণ ও অন্যান্য কাজের জন্য একটি পৃথক কক্ষ থাকা আবশ্যক। এ কক্ষটি আলো-বাতাসযুক্ত এবং স্বাস্থ্যসম্মত হওয়া বাঞ্ছনীয়।
গলদা চিংড়ির লার্ভার রূপান্তর এবং এলআরটি-তে বিভিন্ন ধরনের রোগ জীবাণু পর্যবেক্ষণ, বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের উপযোগিতা পরীক্ষা ও সংরক্ষণ, আর্টিমিয়া পর্যবেক্ষণ এবং অনুরূপ অন্যান্য পরীক্ষামূলক কাজের জন্য অবশ্যই একটি ল্যাবরেটরি ইউনিট থাকা প্রয়াজন।
গলদা চিংড়ি লার্ভাকে প্রতিদিন খাদ্য হিসেবে আর্টিমিয়া নল্লি সরবরাহ করতে হয়। তাই চাহিদা অনুযায়ী আর্টিমিয়া নল্লি হ্যাচিং-এর জন্য আর্টিমিয়া ট্যাংক ব্যবহার করতে হয়। এ জাতীয় ট্যাংক সিমেন্ট-কংক্রিটের হতে পারে। তবে ফাইবার গ্লাস বা প্লাস্টিকের স্থানান্তরযোগ্য ট্যাংক হলে তা পরিষ্কার করা এবং স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে সংরক্ষণ করা সহজ হয় ও স্বাস্থ্যসম্মত রাখা সুবিধাজনক হয়।
এখানে পিএল বিক্রির আগে তাকে খাপ খাওয়ানো এবং পরিবহনের উদ্দেশ্যে উপযুক্তভাবে প্যাকিং করার জন্য আলাদা একটি শেড থাকতে হবে। তাছাড়া এ শেডে বিক্রয়ের জন্য পিএল রাখার সুবিধা, প্যাকিং এর জন্য প্রয়োজনীয় পানি রাখার সুবিধা, পোনা ও অক্সিজেন দেয়ার সুবিধা, ক্রেতার বিশ্রাম এবং বসার সুবিধা ইত্যাদি থাকা প্রয়োজন। এ এলাকায় ট্রাক বা অন্য কোনো যানবাহন সহজে যাতায়াত করতে পারে সেজন্য রাস্তা ও অন্যান্য ভৌত সুবিধা নির্মাণ করতে হবে।
হ্যাচারির সামগ্রিক হাইজিন বা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা রক্ষার উদ্দেশ্যে এর উপযোগী নিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। প্রত্যেকটি উৎপাদন ইউনিট থেকে বর্জ্য পানি সঠিকভাবে নিষ্কাশন করা না হলে হ্যাচারির জীব নিরাপত্তা ব্যাহত হবে এবং এ ক্ষেত্রে উন্নত গুণগতমাণ সম্পন্ন স্বাস্থ্যবান পিএল উৎপাদন করা সম্ভব হবে না। হ্যাচারির প্রত্যেকটি উৎপাদন ইউনিট থেকে বর্জ্য পানি নিষ্কাশনের জন্য উপযুক্ত ঢালসম্পন্ন নর্দমা এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে একটি কেন্দ্রীয় নর্দমায় মিলিত হয় এবং এখান থেকে সম্পূর্ণ হ্যাচারির বর্জ্য পানি একটি পৃথক ট্যাংকে শোধনের জন্য জমা হয়। জমাকৃত বর্জ্যপানি এ ট্যাংকে শোধনের পূর্বে বাইরে প্রকৃতিতে অবমুক্ত করা যাবে না।
হ্যাচারির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি এ ইউনিটে স্থাপনপূর্বক পরিচালনা করা হয়। এসব যন্ত্রপাতির মধ্যে রয়েছে ব্রোয়ার, জেনারেটর, সাবমার্সিবল হিটারের জন্য অটো থার্মো-কন্ট্রোল প্যানেল বোর্ড, ইউডি স্টেরিলাইজার, কার্টিজ ফিল্টার, বিদ্যুতের মিটার ও প্রধান সুইচ ইত্যাদি। হ্যাচারিতে শব্দদূষণ এবং ডিজেল ও অন্যান্য জ্বালানির কারণে দূষণের সম্ভাব্যতা পরিহার করার উদ্দেশ্যে জেনারেটরসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি স্থাপনের বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। হ্যাচারির বিভিন্ন ভৌত অবকাঠামোর সাথে মানানসই অবস্থানে পরিকল্পিত ভাবে এসব যন্ত্রপাতি স্থাপন করা না হলে হ্যাচারি পরিচালনার কাজ জটিল ও ব্যয়বহুল হয়ে পড়ার আশংকা দেখা দিতে পারে।
একটি বাণিজ্যিক হ্যাচারিতে উন্নত গুণগতমান সম্পন্ন পিএল উৎপাদন ও বিক্রয়ের কাজকে সহায়তা করার উদ্দেশ্যে আরও কিছু ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ করা প্রয়োজন হয়। এসব অবকাঠামো সরাসরি উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত না হলেও হ্যাচারির সার্বিক বাণিজ্যিক উৎকর্ষ সাধনে এসব অবকাঠামোর যথেষ্ট গুরুত্ব রযেছে। এসব অবকাঠামোগুলো হচ্ছে (১) অফিস রুম, (২) স্টোর রুম, (৩) রেস্ট রুম বা গেস্ট হাউস (৪) কর্মচারী, টেকনিশিয়ান এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের জন্য পৃথক পৃথক আবাসিক সুবিধা এবং আবাসিক ইউনিটসমূহের জন্য সম্পূর্ণ পৃথক নর্দমা ও নিষ্কাশন ব্যবস্থা, (৫) গার্ড শেড, (৬) গ্যারেজ এবং গাড়ি পার্কিং এর স্থান (৯) গেইট, সীমানা প্রাচীর, অভ্যন্তরীণ রাস্তা ও প্রাঙ্গণ বিদ্যুতায়ন ইত্যাদি। এসব অবকাঠামোর ডিজাইন, আয়তন ও অন্যান্য সুবিধা সংযোজনের বিষয়টি হ্যাচারির চাহিদা, প্রয়োজনীয়তা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার উপরে ভিত্তি করে নির্মাণ করতে হবে।
যে সকল হ্যাচারির আঙ্গিনায় পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে সে সকল হ্যাচারিতে এ ধরনের পুকুর নির্মাণ ও ব্যবহার হ্যাচারি, পরিচালনার জন্য সুবিধাজনক এবং এতে হ্যাচারি পরিচালনা বেশ লাভজনক। হ্যাচারি সংলগ্ন স্থানে ব্রুড পালনের পুকুর থাকলে যথা সময়ে নিজস্ব হ্যাচারিতে ব্যবহারের জন্য ব্রুড চিংড়ি পাওয়া নিশ্চিত করা যায়। তাছাড়া অবিক্রিত পিএল হ্যাচারি সংলগ্ন নার্সারি পুকুরে প্রতিপালন করে জুভেনাইল পর্যায়ে বড় করে ও বিক্রয় করে অধিক মুনাফা অর্জন করা সম্ভব। নার্সারি পুকুরের আয়তন ১০-২০ শতক হতে পারে এবং পানির গড় গভীরতা ৬০-৭০ সেমি রাখা যেতে পারে। রুড পালন পুকুরের আয়তনও হ্যাচারিতে ব্রুড চিংড়ির চাহিদা এবং ব্যবস্থাপনা কৌশলের উপর নির্ভর করে নির্ধারণ করতে হবে। এ সকল পুকুরের পানির গড় গভীরতা ১-১.৫ মিটার পর্যন্ত রাখা যেতে পারে।
Read more